বায়োলজি চ্যাপ্টার ৩ – কোষ বিভাজন

আপনার দেওয়া প্রতিটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করাটা একটা বিশাল ব্যাপার! তবে আমি চেষ্টা করছি আপনার জন্য প্রতিটি বিষয়েই সহজ ভাষায় একটা ধারণা দিতে, যাতে আপনি পুরো ব্যাপারটা ভালোভাবে বুঝতে পারেন।

চলুন শুরু করা যাক!

কোষ বিভাজন (Cell Division): জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য প্রক্রিয়া

আমাদের চারপাশে যত জীব দেখতে পাই—ছোট্ট এক ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে বিশাল তিমি মাছ পর্যন্ত—সবার জীবনের শুরু কিন্তু একটা মাত্র কোষ থেকে। আর এই একটা কোষ থেকে কোটি কোটি কোষ তৈরি হয়ে একটা সম্পূর্ণ জীবদেহ গঠিত হয়, বা পুরনো কোষের জায়গা নতুন কোষ নেয়, অথবা বংশবৃদ্ধি হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ার মূলে আছে কোষ বিভাজন।

সহজ কথায়, কোষ বিভাজন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি মাতৃকোষ (parent cell) বিভাজিত হয়ে দুই বা ততোধিক অপত্য কোষ (daughter cells) তৈরি করে।


১. কোষ বিভাজন কি?

কোষ বিভাজন হলো জীবদেহের একটি অত্যাবশ্যকীয় জৈবিক প্রক্রিয়া, যেখানে একটি পরিণত কোষ (মাতৃকোষ) বিভাজিত হয়ে হুবহু বা প্রায় হুবহু একই রকম নতুন কোষ (অপত্য কোষ) তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, প্রজনন এবং বংশবিস্তার ঘটে।


২. কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ

মূলত তিন প্রকারের কোষ বিভাজন দেখা যায়:

  • অ্যামাইটোসিস (Amitosis): এটি সরলতম ও প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন। সাধারণত নিম্নশ্রেণির জীবদেহে দেখা যায়।
  • মাইটোসিস (Mitosis): এটি দেহকোষের বিভাজন। এর মাধ্যমে জীবদেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ হয়।
  • মিয়োসিস (Meiosis): এটি জননকোষ (গ্যামেট) সৃষ্টির জন্য ঘটে। এর মাধ্যমে ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায় এবং বংশগতীয় বৈচিত্র্য আসে।

৩. কোষ বিভাজনের পর্যায়

কোষ বিভাজনকে প্রধানত দুটি মূল পর্যায়ে ভাগ করা যায়:

  • ক্যারিওকাইনেসিস (Karyokinesis): নিউক্লিয়াসের বিভাজন।
  • সাইটোকাইনেসিস (Cytokinesis): সাইটোপ্লাজমের বিভাজন।

মাইটোসিস ও মিয়োসিস উভয় বিভাজনেই এই পর্যায়গুলো দেখা যায়, তবে তাদের অভ্যন্তরীণ ধাপগুলো ভিন্ন হয়।


৪. মাইটোসিস কোষ বিভাজন

মাইটোসিস হলো এক ধরণের কোষ বিভাজন যেখানে একটি মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে হুবহু একই রকম দুটি অপত্য কোষ তৈরি করে। অপত্য কোষগুলোর ক্রোমোজোম সংখ্যা এবং জেনেটিক গঠন মাতৃকোষের মতোই থাকে। একে “সমীকরণিক বিভাজন” (Equational division) বলা হয়।

কোথায় ঘটে: জীবদেহের দেহকোষে (somatic cells) এই বিভাজন ঘটে। যেমন: চামড়ার কোষ, পেশী কোষ, উদ্ভিদের কাণ্ড ও মূলের অগ্রভাগের কোষ।

গুরুত্ব:

  • জীবের দৈহিক বৃদ্ধি।
  • ক্ষয়প্রাপ্ত বা মৃত কোষের প্রতিস্থাপন।
  • অযৌন প্রজনন (যেমন: অ্যামিবা, ইস্ট)।
  • ক্ষত নিরাময়।

৫. মাইটোসিস এর পর্যায়

মাইটোসিস বিভাজনকে প্রধানত ৫টি দশায় ভাগ করা যায়, তবে এর আগে কোষ একটি প্রস্তুতিমূলক দশা “ইন্টারফেজ” (Interphase) অতিক্রম করে।

ইন্টারফেজ: এটি কোষ বিভাজনের পূর্বপ্রস্তুতিমূলক দশা। এই দশায় কোষ বৃদ্ধি পায়, ডিএনএ প্রতিলিপিকরণ হয় এবং বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও প্রোটিন তৈরি হয়। ইন্টারফেজকে G1, S এবং G2 এই তিনটি উপ-দশায় ভাগ করা হয়।

মাইটোসিসের দশাগুলো (ক্যারিওকাইনেসিস):

  • প্রোফেজ (Prophase):

    • নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাস ধীরে ধীরে অদৃশ্য হতে শুরু করে।
    • ক্রোমাটিন তন্তুগুলো কুণ্ডলিত ও ঘন হয়ে ক্রোমোজোমে পরিণত হয়। প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি ক্রোমাটিড (sister chromatids) নিয়ে গঠিত হয়, যা সেন্ট্রোমিয়ার দ্বারা যুক্ত থাকে।
    • প্রাণীকোষে সেন্ট্রোজোম বিভাজিত হয়ে দুটি সেন্ট্রিওল তৈরি করে যারা মেরুর দিকে সরে যেতে শুরু করে এবং অ্যাস্টার রশ্মি (aster rays) তৈরি করে। মাকু তন্তু (spindle fibers) গঠন শুরু হয়।
  • মেটাফেজ (Metaphase):

    • নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাস পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
    • ক্রোমোজোমগুলো কোষের বিষুবীয় অঞ্চলে (equatorial plate বা metaphase plate) সারিবদ্ধভাবে বিন্যস্ত হয়।
    • মাকু তন্তুগুলো প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে সংযুক্ত হয়।
  • এনাফেজ (Anaphase):

    • প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার বিভক্ত হয়ে যায়।
    • সিস্টার ক্রোমাটিডগুলো এখন আলাদা ক্রোমোজোম হিসেবে গণ্য হয় এবং মাকু তন্তুর টানে বিপরীত মেরুর দিকে সরে যেতে শুরু করে।
    • এই দশায় ক্রোমোজোমগুলোকে V, L, J বা I অক্ষরের মতো দেখায়, যা তাদের সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে।
  • টেলোফেজ (Telophase):

    • ক্রোমোজোমগুলো কোষের দুই বিপরীত মেরুতে পৌঁছে যায় এবং তাদের কুণ্ডলী খোলা শুরু হয়।
    • নতুন নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাস পুনরায় গঠিত হয় প্রতিটি মেরুতে।
    • মাকু তন্তুগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়।
    • এই দশায় দুটি নতুন নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
  • সাইটোকাইনেসিস (Cytokinesis):

    • এটি সাইটোপ্লাজমের বিভাজন।
    • প্রাণীকোষে: কোষের মাঝখানে একটি খাঁজ (cleavage furrow) তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে গভীর হয়ে দুটি অপত্য কোষ তৈরি করে।
    • উদ্ভিদকোষে: কোষের মাঝখানে একটি কোষ প্লেট (cell plate) গঠিত হয়, যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে দুটি অপত্য কোষে পরিণত হয় এবং তাদের মাঝে নতুন কোষ প্রাচীর তৈরি হয়।
কোষ বিভাজন

৬. কোষে ক্রোমোজোমের ভূমিকা

ক্রোমোজোম হলো ডিএনএ এবং প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত সুতোর মতো কাঠামো, যা কোষের নিউক্লিয়াসে থাকে। কোষ বিভাজনে এদের ভূমিকা অপরিসীম:

  • বংশগতীয় তথ্য বহন: ক্রোমোজোম জীবের সমস্ত বংশগতীয় তথ্য (জিন) ধারণ করে।
  • সুষম বণ্টন: কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোমগুলো সুনির্দিষ্টভাবে বিভাজিত হয়, যাতে অপত্য কোষগুলো মাতৃকোষের মতো একই সংখ্যক এবং একই প্রকারের ক্রোমোজোম পায়। এটি বংশগতীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
  • প্রজাতি বৈশিষ্ট্য রক্ষা: প্রতিটি প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্দিষ্ট, যা কোষ বিভাজনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বজায় থাকে।

৭. কোষ বিভাজনের গুরুত্ব

কোষ বিভাজন জীবের অস্তিত্ব এবং বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

  • বৃদ্ধি: একটি একক কোষ থেকে পূর্ণাঙ্গ জীবদেহ সৃষ্টির জন্য কোষ বিভাজন অপরিহার্য।
  • ক্ষয়পূরণ ও মেরামত: দেহের ক্ষয়প্রাপ্ত বা মৃত কোষের জায়গা নতুন কোষ তৈরি করে। (যেমন: আঘাত লাগলে ক্ষত সারানো, চামড়া বা রক্তের কোষের প্রতিস্থাপন)।
  • প্রজনন: অযৌন ও যৌন উভয় প্রকার প্রজননেই কোষ বিভাজন গুরুত্বপূর্ণ।
  • বংশগতি রক্ষা: মাইটোসিসের মাধ্যমে বংশগতীয় বৈশিষ্ট্যগুলো অপত্য কোষে হুবহু স্থানান্তরিত হয়। মিয়োসিসের মাধ্যমে জিনের নতুন সমন্বয় তৈরি হয়, যা বৈচিত্র্য আনে।
  • অঙ্গজ জনন: উদ্ভিদ ও কিছু নিম্নশ্রেণির প্রাণীতে অঙ্গজ জননের মাধ্যমে নতুন জীব তৈরি হয়।
See Also  বায়োলজি চ্যাপ্টার ৪ - জীবনীশক্তি

৮. কোষ বিভাজন চিত্র

(এখানে একটি চিত্র কল্পনা করুন যেখানে মাইটোসিস ও মিয়োসিসের বিভিন্ন পর্যায়গুলো আঁকা আছে। সাধারণত, প্রতিটি পর্যায়ের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্টভাবে দেখানো হয়।)

  • মাইটোসিস চিত্র: প্রোফেজে ক্রোমোজোম ঘন হচ্ছে, মেটাফেজে বিষুবীয় তলে সাজানো, এনাফেজে ক্রোমাটিডগুলো বিপরীত দিকে যাচ্ছে, টেলোফেজে দুটি নিউক্লিয়াস তৈরি হচ্ছে এবং সাইটোকাইনেসিসে দুটি কোষ আলাদা হচ্ছে।
  • মিয়োসিস চিত্র: মিয়োসিস-১ এ হোমোলোগাস ক্রোমোজোম আলাদা হচ্ছে এবং মিয়োসিস-২ এ সিস্টার ক্রোমাটিড আলাদা হচ্ছে, ফলে ৪টি অপত্য কোষ তৈরি হচ্ছে।

৯. কোষ বিভাজন ভিডিও

(এখানে আপনি ইউটিউবে “Cell Division Animation” বা “কোষ বিভাজন এনিমেশন” লিখে সার্চ করতে পারেন। হাজার হাজার চমৎকার শিক্ষামূলক ভিডিও পাবেন যা দেখে প্রক্রিয়াটি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। বিশেষ করে 3D অ্যানিমেশনগুলো খুবই কার্যকর।)


১০. কোষ বিভাজন পরীক্ষার প্রশ্ন

পরীক্ষায় সাধারণত নিচের ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে:

  • মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য লিখুন।
  • মাইটোসিসের প্রোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য লিখুন।
  • মিয়োসিসকে কেন হ্রাসমূলক বিভাজন বলা হয়?
  • ক্রসিং ওভার কী এবং এর গুরুত্ব কী?
  • কোষচক্রের বিভিন্ন পর্যায়গুলো ব্যাখ্যা করুন।
  • কোষ বিভাজনে ক্রোমোজোমের ভূমিকা কী?
  • ক্যান্সারের সাথে কোষ বিভাজনের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করুন।
  • সাইটোকাইনেসিস কী? উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষে এর পার্থক্য লিখুন।

১১. কোষ বিভাজন MCQ

কিছু উদাহরণ:

  • কোন বিভাজনে ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক হয়? (ক) মাইটোসিস (খ) মিয়োসিস (গ) অ্যামাইটোসিস (ঘ) উপরের কোনোটিই নয়।
  • মাইটোসিসের কোন দশায় ক্রোমোজোমগুলো বিষুবীয় তলে সজ্জিত হয়? (ক) প্রোফেজ (খ) মেটাফেজ (গ) এনাফেজ (ঘ) টেলোফেজ।
  • প্রাণীকোষে সাইটোকাইনেসিস কীভাবে ঘটে? (ক) কোষ প্রাচীর গঠন (খ) কোষ প্লেট গঠন (গ) ক্লিভেজ ফারো গঠন (ঘ) নিউক্লিয়াস বিভাজন।
  • DNA প্রতিলিপিকরণ কোষচক্রের কোন দশায় ঘটে? (ক) G1 (খ) S (গ) G2 (ঘ) M।

১২. কোষ বিভাজন নোট

(উপরে যা আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলোকে গোছানো আকারে লিখলেই একটি পূর্ণাঙ্গ নোট তৈরি হয়ে যাবে। প্রতিটি অংশকে সুন্দরভাবে পয়েন্ট আকারে বা বুলেট পয়েন্ট দিয়ে লিখলে ভালো হয়।)


১৩. কোষ বিভাজন সংজ্ঞা

উপরে আলোচনা করা হয়েছে।


১৪. কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া

উপরে মাইটোসিস ও মিয়োসিসের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


১৫. কোষ বিভাজন এবং বৃদ্ধি

জীবের দৈহিক বৃদ্ধির মূল ভিত্তি হলো কোষ বিভাজন। একটি একক জাইগোট থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবদেহ তৈরি হয় কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে, যা মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ফল। কোষ বিভাজনের মাধ্যমেই একটি জীবের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি পায়।


১৬. কোষ বিভাজন এবং ক্যান্সার

ক্যান্সার হলো কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার একটি মারাত্মক ত্রুটি। সাধারণত, কোষ বিভাজন একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে। কিন্তু যখন এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে যায় এবং কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে ও অস্বাভাবিক হারে বিভাজিত হতে থাকে, তখনই ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। এই অনিয়ন্ত্রিত কোষগুলো টিউমার তৈরি করে যা শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়।


১৭. কোষ বিভাজন এবং বংশগতি

কোষ বিভাজন বংশগতির জন্য অপরিহার্য।

  • মাইটোসিস: এর মাধ্যমে জেনেটিক তথ্য হুবহু অপত্য কোষে স্থানান্তরিত হয়, যা দৈহিক কোষের বংশগতি বজায় রাখে।
  • মিয়োসিস: এর মাধ্যমে জননকোষ (গ্যামেট) তৈরি হয়, যা বংশগতীয় তথ্য পিতামাতা থেকে সন্তানে বহন করে। ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে জিনের নতুন সমন্বয় ঘটে, যা বংশগতীয় বৈচিত্র্য আনে।

১৮. মিয়োসিস কোষ বিভাজন

মিয়োসিস হলো এক বিশেষ ধরণের কোষ বিভাজন যা ডিপ্লয়েড (2n) মাতৃকোষ থেকে হ্যাপ্লয়েড (n) অপত্য কোষ (গ্যামেট বা রেণু) তৈরি করে। এই বিভাজনে ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়, তাই একে “হ্রাসমূলক বিভাজন” (Reductional division) বলা হয়।

কোথায় ঘটে: জননকোষ (গ্যামেট) উৎপাদনে (যেমন: শুক্রাণু ও ডিম্বাণু) এবং উদ্ভিদে রেণু উৎপাদনে।

গুরুত্ব:

  • প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক রাখা।
  • যৌন প্রজননের জন্য গ্যামেট তৈরি।
  • ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে বংশগতীয় বৈচিত্র্য সৃষ্টি।

১৯. মিয়োসিস এর পর্যায়

মিয়োসিস দুটি প্রধান ধাপে সম্পন্ন হয়: মিয়োসিস-১ এবং মিয়োসিস-২। এই দুটি ধাপের আগে ইন্টারফেজ দশা থাকে।

মিয়োসিস-১ (হ্রাসমূলক বিভাজন):

  • প্রোফেজ-১ (Prophase I): এটি মিয়োসিসের সবচেয়ে দীর্ঘ ও জটিল দশা।

    • ক্রোমোজোম কুণ্ডলিত ও ঘন হয়।
    • সিন্যাপসিস (Synapsis): সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলো (Homologous chromosomes) জোড় বাঁধে।
    • ক্রসিং ওভার (Crossing Over): সমসংস্থ ক্রোমোজোমের নন-সিস্টার ক্রোমাটিডগুলোর মধ্যে অংশের বিনিময় ঘটে। এটি বংশগতীয় বৈচিত্র্যের মূল কারণ।
    • নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাস অদৃশ্য হতে শুরু করে।
    • মাকু তন্তু গঠন শুরু হয়।
    • প্রোফেজ-১ কে আবার লেপ্টোটিন, জাইগোটিন, প্যাকাইটিন, ডিপ্লোটিন, ডায়াকাইনেসিস—এই ৫টি উপ-দশায় ভাগ করা হয়।
  • মেটাফেজ-১ (Metaphase I):

    • সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়গুলো কোষের বিষুবীয় তলে সজ্জিত হয়।
    • মাকু তন্তুগুলো প্রতিটি সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়ের সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে সংযুক্ত হয়।
  • এনাফেজ-১ (Anaphase I):

    • সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়গুলো একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপরীত মেরুর দিকে সরে যায়। এই সময় সিস্টার ক্রোমাটিডগুলো সেন্ট্রোমিয়ারে যুক্ত থাকে। (এটাই মাইটোসিস এনাফেজের সাথে মূল পার্থক্য)।
  • টেলোফেজ-১ (Telophase I):

    • প্রতিটি মেরুতে একটি করে হ্যাপ্লয়েড সেট ক্রোমোজোম পৌঁছায়।
    • নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাস পুনরায় গঠিত হতে পারে (কিছু ক্ষেত্রে হয় না)।
    • সাইটোকাইনেসিস ঘটে, ফলে দুটি হ্যাপ্লয়েড অপত্য কোষ তৈরি হয়।

মিয়োসিস-২ (সমীকরণিক বিভাজন): (এটি মাইটোসিস বিভাজনের মতোই)

  • প্রোফেজ-২ (Prophase II):

    • প্রথমে নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাস অদৃশ্য হয় (যদি টেলোফেজ-১ এ গঠিত হয়ে থাকে)।
    • মাকু তন্তু গঠিত হয়।
  • মেটাফেজ-২ (Metaphase II):

    • ক্রোমোজোমগুলো (এখন প্রতিটি দুটি ক্রোমাটিড নিয়ে গঠিত) কোষের বিষুবীয় তলে সজ্জিত হয়।
  • এনাফেজ-২ (Anaphase II):

    • সেন্ট্রোমিয়ার বিভক্ত হয় এবং সিস্টার ক্রোমাটিডগুলো আলাদা হয়ে বিপরীত মেরুর দিকে সরে যায়।
  • টেলোফেজ-২ (Telophase II):

    • ক্রোমোজোমগুলো মেরুতে পৌঁছায়।
    • নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাস পুনরায় গঠিত হয়।
    • সাইটোকাইনেসিস ঘটে, ফলে মোট চারটি হ্যাপ্লয়েড অপত্য কোষ তৈরি হয়।
See Also  Ayman Sadiq: Inspiring Bangladesh's Youth Through Education

২০. ক্রসিং ওভার

ক্রসিং ওভার হলো মিয়োসিস-১ এর প্রোফেজ-১ দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোমের নন-সিস্টার ক্রোমাটিডগুলোর মধ্যে জেনেটিক অংশের বিনিময় প্রক্রিয়া। এর ফলে জিনের নতুন সমন্বয় তৈরি হয়, যা বংশগতীয় বৈচিত্র্য এবং বিবর্তনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


২১. গ্যামেট উৎপাদন

মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমেই জীবদেহে গ্যামেট (যেমন: শুক্রাণু ও ডিম্বাণু) উৎপন্ন হয়। এই গ্যামেটগুলো হ্যাপ্লয়েড (n) হয়, অর্থাৎ এদের ক্রোমোজোম সংখ্যা দেহের অন্যান্য কোষের (ডিপ্লয়েড-2n) অর্ধেক থাকে। দুটি গ্যামেটের নিষিক্তকরণের ফলে ডিপ্লয়েড জাইগোট তৈরি হয়, যা থেকে নতুন জীবের সৃষ্টি হয়।


২২. কোষ বিভাজন ও অঙ্গজ জনন

কিছু জীব (বিশেষ করে উদ্ভিদ) অযৌন বা অঙ্গজ জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। এই প্রক্রিয়ায় মাইটোসিস কোষ বিভাজনই মূল ভূমিকা পালন করে। যেমন: আলুর চোখ থেকে নতুন গাছ হওয়া, গোলাপের ডাল কেটে নতুন চারা তৈরি করা—এগুলো মাইটোসিস বিভাজনের ফলেই ঘটে। এখানে জেনেটিক্যালি অভিন্ন অপত্য জীব তৈরি হয়।


২৩. অ্যামাইটোসিস

অ্যামাইটোসিস হলো কোষ বিভাজনের একটি সরল ও প্রত্যক্ষ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে নিউক্লিয়াস সরাসরি ডাম্বেল আকৃতির হয়ে মাঝখান থেকে সংকুচিত হয়ে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়, এবং এরপর সাইটোপ্লাজম বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষ তৈরি করে। এখানে মাকু তন্তু বা ক্রোমোজোম গঠন হয় না।

কোথায় দেখা যায়: নিম্নশ্রেণির জীব (যেমন: অ্যামিবা, ইস্ট, ব্যাকটেরিয়া) এবং কিছু উচ্চশ্রেণির প্রাণীর ক্ষয়প্রাপ্ত বা অসুস্থ কোষে (যেমন: ভ্রূণীয় পর্দা, ক্যানসারের কোষ)।

সীমাবদ্ধতা: এতে ক্রোমোজোমের সুষম বণ্টন হয় না, তাই এটি খুব একটা সাধারণ প্রক্রিয়া নয়।


২৪. কোষ চক্র (Cell Cycle)

কোষ চক্র হলো একটি কোষের জন্ম থেকে শুরু করে বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোষ তৈরি হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ। এতে দুটি প্রধান পর্যায় থাকে:

  • ইন্টারফেজ (Interphase): কোষ বিভাজনের জন্য প্রস্তুতিমূলক দশা।
  • মাইটোসিস বা M ফেজ (M Phase): প্রকৃত কোষ বিভাজন দশা (ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস)।

২৫. কোষ চক্রের পর্যায়

কোষ চক্রের ইন্টারফেজকে তিনটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা হয়:

  • জি ১ পর্যায় (G1 Phase – Gap 1):

    • এই দশায় কোষ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
    • প্রোটিন, এনজাইম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি হয়।
    • DNA প্রতিলিপিকরণের জন্য কোষ প্রস্তুত হয়।
  • এস পর্যায় (S Phase – Synthesis):

    • এই দশায় DNA প্রতিলিপিকরণ (replication) ঘটে। প্রতিটি ক্রোমোজোমের DNA দ্বিগুণ হয়ে যায়, ফলে প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি সিস্টার ক্রোমাটিড নিয়ে গঠিত হয়।
  • জি ২ পর্যায় (G2 Phase – Gap 2):

    • কোষ আরও বৃদ্ধি পায়।
    • বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং RNA তৈরি হয়।
    • কোষ বিভাজনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়।

M পর্যায় (Mitotic Phase): এই দশায় প্রকৃত কোষ বিভাজন ঘটে, যা মাইটোসিস (বা মিয়োসিস) এবং সাইটোকাইনেসিস নিয়ে গঠিত।


২৬. কোষ বিভাজনের তাৎপর্য

উপরে “কোষ বিভাজনের গুরুত্ব” অংশে আলোচনা করা হয়েছে।


২৭. কোষ বিভাজন এবং প্রজনন

কোষ বিভাজন প্রজননের মূল ভিত্তি:

  • অযৌন প্রজনন: মাইটোসিসের মাধ্যমে ঘটে। এককোষী জীব বা কিছু বহুকোষী জীব মাইটোসিসের মাধ্যমে নতুন জীব তৈরি করে।
  • যৌন প্রজনন: মিয়োসিসের মাধ্যমে গ্যামেট তৈরি হয়। এই গ্যামেটগুলির মিলন (নিষিক্তকরণ) ঘটে নতুন জীব সৃষ্টির জন্য।

২৮. উদ্ভিদ কোষ বিভাজন

উদ্ভিদ কোষেও মাইটোসিস ও মিয়োসিস ঘটে। তবে প্রাণীকোষের সাথে কিছু পার্থক্য আছে:

  • সেন্ট্রিওলের অভাব: উদ্ভিদ কোষে সেন্ট্রিওল থাকে না। মাকু তন্তুগুলো সাইটোপ্লাজমের মাইক্রোটিউবিউলস থেকে গঠিত হয়।
  • সাইটোকাইনেসিস: কোষ প্লেট গঠনের মাধ্যমে ঘটে, যেখানে প্রাণীকোষে ক্লিভেজ ফারো তৈরি হয়।
  • কোষ প্রাচীর: নতুন অপত্য কোষের মাঝে নতুন কোষ প্রাচীর তৈরি হয়।

২৯. প্রাণী কোষ বিভাজন

প্রাণী কোষেও মাইটোসিস ও মিয়োসিস ঘটে। প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  • সেন্ট্রিওলের উপস্থিতি: সেন্ট্রিওল মাকু তন্তু গঠনে সাহায্য করে।
  • সাইটোকাইনেসিস: ক্লিভেজ ফারো গঠনের মাধ্যমে ঘটে।
  • কোষ প্রাচীরের অভাব: প্রাণী কোষে কোষ প্রাচীর থাকে না।

৩০. কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া উদাহরণ

  • ক্ষত নিরাময়: আপনার হাতে কেটে গেলে, সেই ক্ষত স্থানের কোষগুলো মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে দ্রুত নতুন কোষ তৈরি করে ক্ষত সারিয়ে তোলে।
  • শিশুর বৃদ্ধি: একটি নবজাতক শিশু থেকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষে পরিণত হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ঘটে।
  • চুল ও নখের বৃদ্ধি: চুল ও নখের গোড়ায় অবস্থিত কোষগুলো ক্রমাগত মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়।
  • রক্তকণিকা তৈরি: অস্থিমজ্জায় স্টেম কোষ মাইটোসিসের মাধ্যমে নতুন রক্তকণিকা (লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা) তৈরি করে।
  • শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদন: পুরুষ ও নারীর জননতন্ত্রে মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়।

৩১. কোষ বিভাজন এবং রোগ

কোষ বিভাজনের ত্রুটি অনেক রোগের কারণ হতে পারে:

  • ক্যান্সার: অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন।
  • জেনেটিক রোগ: মিয়োসিস বিভাজনের সময় ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতা (যেমন: ডাউন সিনড্রোম – ২১ নং ক্রোমোজোমের ট্রাইসোমি) বিভিন্ন জেনেটিক রোগের কারণ হয়।
  • কোষের বার্ধক্য (Aging): কোষ বিভাজনের ক্ষমতা কমে যাওয়া বা ত্রুটিপূর্ণ কোষ বিভাজন বার্ধক্য প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।

৩২. কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ

কোষ বিভাজন একটি অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া। এই নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন প্রোটিন (যেমন: সাইক্লিন, সাইক্লিন-ডিপেন্ডেন্ট কাইনেজ বা CDK) এবং চেকপয়েন্টের (checkpoints) মাধ্যমে ঘটে। এই চেকপয়েন্টগুলো নিশ্চিত করে যে কোষ বিভাজনের প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে এবং কোনো ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করা হয় বা কোষকে অ্যাপোপটোসিস (programmed cell death) এর মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়। এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ত্রুটিই ক্যান্সারের জন্ম দেয়।


৩৩. কোষ বিভাজন এবং ডিএনএ

ডিএনএ (Deoxyribonucleic acid) হলো কোষ বিভাজনের প্রাণ।

  • জেনেটিক তথ্য: ডিএনএ ক্রোমোজোমের মূল উপাদান এবং সমস্ত জেনেটিক তথ্য ধারণ করে।
  • প্রতিলিপিকরণ: কোষ বিভাজনের S দশায় ডিএনএ প্রতিলিপিকরণ হয়, যাতে অপত্য কোষগুলো ডিএনএর একটি সম্পূর্ণ ও অভিন্ন সেট পায়।
  • সুষম বণ্টন: ডিএনএযুক্ত ক্রোমোজোমগুলোকে সুষমভাবে অপত্য কোষে বণ্টন করাই কোষ বিভাজনের মূল লক্ষ্য।
See Also  বায়োলজি চ্যাপ্টার ১২ - জীবের বংশগতি ও জৈব অভিব্যক্তি

৩৪. কোষ বিভাজন মডেল

কোষ বিভাজন মডেল বলতে সাধারণত কোষচক্রের বিভিন্ন পর্যায় এবং তাদের নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়। বিভিন্ন বিজ্ঞানী কোষ বিভাজনের ধাপগুলো এবং তাদের নিয়ন্ত্রক অণুগুলো আবিষ্কার করে এই মডেল তৈরি করেছেন, যা ক্যান্সারের মতো রোগ বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


৩৫. কোষ বিভাজন এবং কোষের প্রকারভেদ

বিভিন্ন প্রকার কোষে কোষ বিভাজন ভিন্নভাবে ঘটে:

  • দেহকোষ (Somatic Cells): মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
  • জননকোষ (Germ Cells): মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে গ্যামেট তৈরি করে।
  • স্টেম সেল (Stem Cells): এই কোষগুলো মাইটোসিসের মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে বিভিন্ন ধরণের বিশেষায়িত কোষে রূপান্তরিত হতে পারে।

৩৬. কোষ বিভাজন এবং কোষ অঙ্গাণু

কোষ বিভাজনের সময় কোষের বিভিন্ন অঙ্গাণুও (যেমন: মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, গলগি বডি) বিভাজিত হয়ে অপত্য কোষগুলোতে সুষমভাবে বণ্টিত হয়, যাতে নতুন কোষগুলোও স্বাভাবিক কাজ করতে পারে।


৩৭. কোষ বিভাজন অনুশীলন

(এখানে সাধারণত বিভিন্ন চিত্র দেখে পর্যায় চিহ্নিত করা, মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য লেখা, বা কোষ বিভাজন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান অনুশীলনের কথা বলা হয়।)


৩৮. কোষ বিভাজন কুইজ

(উপরে MCQ এর মতো প্রশ্নগুলো কুইজ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।)


৩৯. কোষ বিভাজন নিয়ে আলোচনা

উপরের প্রতিটি বিষয়ই কোষ বিভাজন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার অংশ।


৪০. কোষ বিভাজন এবং জীবজগতে এর প্রভাব

কোষ বিভাজন ছাড়া জীবজগতের অস্তিত্ব অসম্ভব। এটি:

  • জীবের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করে।
  • ক্ষয়পূরণ ও টিস্যু মেরামত করে।
  • প্রজননের মাধ্যমে প্রজাতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে।
  • বংশগতীয় বৈচিত্র্য তৈরি করে, যা বিবর্তনের ভিত্তি।

৪১. কোষ বিভাজন এবং কোষের গঠন

কোষ বিভাজনের সময় কোষের গঠনগত পরিবর্তন আসে:

  • নিউক্লিয়াস: নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাস অদৃশ্য হয় এবং পুনরায় গঠিত হয়।
  • ক্রোমোজোম: ক্রোমাটিন তন্তু থেকে ক্রোমোজোম গঠিত হয় এবং বিভাজিত হয়।
  • সাইটোপ্লাজম: বিভাজিত হয়ে দুটি নতুন কোষ তৈরি করে।
  • মাকু তন্তু: বিভাজনের সময় ক্রোমোজোমগুলোকে টেনে নেওয়ার জন্য অস্থায়ীভাবে গঠিত হয়।

৪২. কোষ বিভাজন এবং কোষ প্রাচীর

উদ্ভিদ কোষে সাইটোকাইনেসিসের সময় কোষের মাঝখানে কোষ প্লেট তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে নতুন কোষ প্রাচীরে রূপান্তরিত হয়ে দুটি অপত্য কোষকে আলাদা করে। প্রাণী কোষে কোষ প্রাচীর না থাকায় এই প্রক্রিয়া ভিন্নভাবে ঘটে।


৪৩. কোষ বিভাজন এবং সাইটোপ্লাজম

ক্যারিওকাইনেসিসের পর সাইটোকাইনেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোষে বণ্টিত হয়। এতে কোষের আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং অঙ্গাণুগুলোও বণ্টিত হয়।


৪৪. কোষ বিভাজন এবং নিউক্লিয়াস

কোষ বিভাজনের প্রথম ও প্রধান ধাপ হলো নিউক্লিয়াসের বিভাজন (ক্যারিওকাইনেসিস)। নিউক্লিয়াসের মধ্যেই ক্রোমোজোমগুলো থাকে এবং তাদের সুষম বণ্টন নিউক্লিয়াস বিভাজনের মাধ্যমেই ঘটে।


৪৫. কোষ বিভাজন এবং জিনগত বৈচিত্র্য

মিয়োসিস কোষ বিভাজন জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টির মূল কারণ। ক্রসিং ওভার এবং সমসংস্থ ক্রোমোজোমের স্বাধীন বিন্যাসের (Independent Assortment) ফলে অপত্য কোষে জিনের নতুন সমন্বয় তৈরি হয়, যা পিতামাতার থেকে ভিন্ন হয়। এই বৈচিত্র্য প্রজাতির টিকে থাকার জন্য এবং বিবর্তনের জন্য অপরিহার্য।


৪৬. কোষ বিভাজন এবং মিউটেশন

কোষ বিভাজনের সময় ডিএনএ প্রতিলিপিকরণের সময় বা ক্রোমোজোম বণ্টনের সময় যদি কোনো ভুল হয়, তাকে মিউটেশন বলে। এই মিউটেশনগুলো জেনেটিক বৈচিত্র্য আনতে পারে, তবে অনেক সময় তা ক্ষতিকরও হতে পারে (যেমন: ক্যান্সারের কারণ)।


৪৭. কোষ বিভাজন এবং ভ্রূণবিদ্যা

ভ্রূণবিদ্যা হলো জীবদেহের ভ্রূণীয় বিকাশ নিয়ে আলোচনা। একটি একক জাইগোট থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ ভ্রূণ তৈরি হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ঘটে। কোষ বিভাজন, কোষের বৃদ্ধি এবং বিভেদীকরণ (differentiation) ভ্রূণ বিকাশের মূল চালিকা শক্তি।


৪৮. কোষ বিভাজন এবং টিস্যু তৈরি

আমাদের দেহের বিভিন্ন টিস্যু (যেমন: পেশী টিস্যু, স্নায়ু টিস্যু, আবরণী টিস্যু) অসংখ্য কোষের সমন্বয়ে গঠিত। এই কোষগুলো মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং বিশেষায়িত হয়ে নির্দিষ্ট টিস্যু ও অঙ্গ তৈরি করে।


৪৯. কোষ বিভাজন এবং অঙ্গাণু

উপরে “কোষ বিভাজন এবং কোষ অঙ্গাণু” অংশে আলোচনা করা হয়েছে।


৫০. কোষ বিভাজন এবং পেশী কোষ

পেশী কোষে (বিশেষ করে কঙ্কাল পেশী কোষে) একবার পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেলে সাধারণত মাইটোসিস বিভাজন খুব কম ঘটে। তবে পেশীর ক্ষতি হলে বা বৃদ্ধি ঘটলে কিছু স্টেম সেল (স্যাটেলাইট সেল) মাইটোসিসের মাধ্যমে নতুন পেশী কোষ তৈরি বা মেরামত করতে পারে।


৫১. কোষ বিভাজন এবং হাড়ের গঠন

হাড়ের বৃদ্ধি এবং মেরামত কোষ বিভাজনের মাধ্যমেই ঘটে। অস্টিওব্লাস্ট (হাড় গঠনকারী কোষ) মাইটোসিসের মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে নতুন হাড়ের টিস্যু তৈরি করে। হাড় ভাঙলে বা ক্ষয় হলে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে মেরামতের জন্য।


৫২. কোষ বিভাজন এবং স্নায়ু কোষ

স্নায়ু কোষ (নিউরন) সাধারণত একবার পরিপক্ক হলে বিভাজিত হয় না (মাইটোসিস করে না)। তবে, কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে মস্তিষ্কের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে নতুন নিউরন তৈরি হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, স্নায়ু কোষের ক্ষতি হলে তা মেরামত করা কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ তারা মাইটোসিস করে না। নিউরোগ্লিয়া (সহায়ক কোষ) বিভাজিত হতে পারে।


আশা করি, এই বিস্তারিত আলোচনা আপনার কোষ বিভাজন সম্পর্কে একটি পরিষ্কার এবং গভীর ধারণা দিতে পেরেছে। আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *