ত্রিকোণমিতি: ত্রিকোণমিতিক অনুপাত, সূত্র ও সমাধান – ৮ম অধ্যায়

গণিতের জগতে ত্রিকোণমিতি এক মজার বিষয়! পাহাড়ের উচ্চতা মাপা থেকে শুরু করে জাহাজের অবস্থান নির্ণয় – সব কিছুতেই এর ব্যবহার রয়েছে। ত্রিকোণমিতির মূল ভিত্তি হলো ত্রিকোণমিতিক অনুপাত। এই অনুপাতগুলো দিয়েই আমরা বিভিন্ন কোণ ও বাহুর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে পারি। আজকের আলোচনায় আমরা ত্রিকোণমিতিক অনুপাত, তাদের চিহ্ন, বিভিন্ন কোণের মান এবং এই সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

Table of Contents

ত্রিকোণমিতিক অনুপাত (Trigonometric Ratios)

ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলো মূলত একটি সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। একটি সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি বাহু – ভূমি, লম্ব এবং অতিভুজ। এই বাহুগুলোর অনুপাতগুলোই ত্রিকোণমিতিক অনুপাত।

  • সাইন (sine) : sin θ = লম্ব / অতিভুজ
  • কোসাইন (cosine) : cos θ = ভূমি / অতিভুজ
  • ট্যানজেন্ট (tangent) : tan θ = লম্ব / ভূমি
  • কোসেকেন্ট (cosecant) : cosec θ = অতিভুজ / লম্ব
  • সেকেন্ট (secant) : sec θ = অতিভুজ / ভূমি
  • কোট্যাঞ্জেন্ট (cotangent) : cot θ = ভূমি / লম্ব

এখানে, θ হলো কোণ।

এই ছয়টি অনুপাতের মধ্যে প্রথম তিনটি (সাইন, কোসাইন, ট্যানজেন্ট) বেশি ব্যবহৃত হয়। বাকি তিনটি এদের বিপরীত অনুপাত। অর্থাৎ, cosec θ = 1/sin θ, sec θ = 1/cos θ এবং cot θ = 1/tan θ।

উদাহরণ

মনে করো, একটি সমকোণী ত্রিভুজের লম্ব ৩ সেমি, ভূমি ৪ সেমি এবং অতিভুজ ৫ সেমি। তাহলে,

  • sin θ = ৩/৫
  • cos θ = ৪/৫
  • tan θ = ৩/৪

বিভিন্ন চতুরভাগে ত্রিকোণমিতিক অনুপাতের চিহ্ন

আমরা জানি, কার্তেসীয় স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় অক্ষগুলো পুরো সমতলকে চারটি ভাগে ভাগ করে, যাদের প্রত্যেকটিকে এক একটি চতুর্ভাগ বলে। এই চারটি চতুর্ভাগে ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলোর চিহ্ন বিভিন্ন হয়।

  • প্রথম চতুর্ভাগ (0° থেকে 90°) : এই চতুর্ভাগে সব ত্রিকোণমিতিক অনুপাত ধনাত্মক।
  • দ্বিতীয় চতুর্ভাগ (90° থেকে 180°) : এই চতুর্ভাগে শুধু সাইন (sin) এবং কোসেক (cosec) ধনাত্মক, বাকি সব ঋণাত্মক।
  • তৃতীয় চতুর্ভাগ (180° থেকে 270°) : এই চতুর্ভাগে শুধু ট্যান (tan) এবং কট (cot) ধনাত্মক, বাকি সব ঋণাত্মক।
  • চতুর্থ চতুর্ভাগ (270° থেকে 360°) : এই চতুর্ভাগে শুধু কোসাইন (cos) এবং সেক (sec) ধনাত্মক, বাকি সব ঋণাত্মক।
See Also  Where to learn Freelancing Skills for Free

এটা মনে রাখার একটা সহজ উপায় হলো “All Students Take Coffee” – এখানে All মানে প্রথম চতুর্ভাগে সবাই পজিটিভ, Students মানে দ্বিতীয় চতুর্ভাগে সাইন পজিটিভ, Take মানে তৃতীয় চতুর্ভাগে ট্যান পজিটিভ, Coffee মানে চতুর্থ চতুর্ভাগে কোসাইন পজিটিভ।

সারণী

চতুর্ভাগকোণ (ডিগ্রি)ধনাত্মক অনুপাতঋণাত্মক অনুপাত
প্রথম0° < θ < 90°AllNone
দ্বিতীয়90° < θ < 180°sin, coseccos, tan, cot, sec
তৃতীয়180° < θ < 270°tan, cotsin, cos, sec, cosec
চতুর্থ270° < θ < 360°cos, secsin, tan, cot, cosec

কোণের প্রমিত অবস্থান

জ্যামিতিতে কোণের প্রমিত অবস্থান বলতে বোঝায় যখন কোণের শীর্ষবিন্দু স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার মূল বিন্দুতে (origin) থাকে এবং কোণের আদি বাহু (initial side) x-অক্ষের ধনাত্মক দিকে থাকে।

প্রমিত অবস্থানে কোণ চেনার নিয়ম

  1. শীর্ষবিন্দু মূল বিন্দুতে থাকতে হবে।
  2. আদি বাহু x-অক্ষের ধনাত্মক দিকে থাকতে হবে।

যদি কোনো কোণ এই শর্তগুলো পূরণ করে, তবে সেটি প্রমিত অবস্থানে আছে বলা যায়।

বিভিন্ন কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত সমূহ

কিছু নির্দিষ্ট কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত আমাদের প্রায়ই ব্যবহার করতে হয়। এদের মানগুলো মনে রাখা দরকার। নিচে একটি টেবিলে এই মানগুলো দেওয়া হলো:

কোণ (ডিগ্রি)30°45°60°90°
sin01/21/√2√3/21
cos1√3/21/√21/20
tan01/√31√3অসংজ্ঞায়িত

এই মানগুলো ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারি।

উদাহরণ

sin 30° + cos 60° এর মান নির্ণয় করো।

আমরা জানি, sin 30° = 1/2 এবং cos 60° = 1/2

সুতরাং, sin 30° + cos 60° = 1/2 + 1/2 = 1

অধ্যায় ৮ঃ ত্রিকোণমিতি: অনুশীলনী ৮.২

অনুশীলনী ৮.২ মূলত বিভিন্ন কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাতের মান এবং তাদের প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করে। এখানে বিভিন্ন ত্রিকোণমিতিক সমীকরণ সমাধান এবং প্রমাণ করার সমস্যা দেওয়া থাকে।

অনুশীলনীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

  • বিভিন্ন কোণের ত্রিকোণমিতিক মান নির্ণয় করা।
  • ত্রিকোণমিতিক অভেদ ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করা।
  • প্রমাণ করা যে, বামপক্ষ = ডানপক্ষ।

উদাহরণ

মান নির্ণয় করো: 2 tan² 45° + cos² 30° – sin² 60°

আমরা জানি, tan 45° = 1, cos 30° = √3/2 এবং sin 60° = √3/2

See Also  10MS মেডিকেল এডমিশন কোর্স - ২০২৫ Promo Code

সুতরাং, 2 tan² 45° + cos² 30° – sin² 60° = 2(1)² + (√3/2)² – (√3/2)² = 2 + 3/4 – 3/4 = 2

অধ্যায় ৮ঃ ত্রিকোণমিতি: অনুশীলনী ৮.৩

অনুশীলনী ৮.৩ পূরক কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত নিয়ে আলোচনা করে। পূরক কোণ হলো সেই দুটি কোণ, যাদের যোগফল ৯০°।

পূরক কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত

  • sin (90° – θ) = cos θ
  • cos (90° – θ) = sin θ
  • tan (90° – θ) = cot θ
  • cot (90° – θ) = tan θ
  • sec (90° – θ) = cosec θ
  • cosec (90° – θ) = sec θ

এই সূত্রগুলো ব্যবহার করে আমরা ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলোকে একটি থেকে অন্যটিতে রূপান্তরিত করতে পারি।

উদাহরণ

tan 65° / cot 25° এর মান নির্ণয় করো।

আমরা জানি, cot θ = tan (90° – θ)

সুতরাং, cot 25° = tan (90° – 25°) = tan 65°

তাহলে, tan 65° / cot 25° = tan 65° / tan 65° = 1

কী takeaways

  • ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলো সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।
  • বিভিন্ন চতুর্ভাগে ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলোর চিহ্ন ভিন্ন হয়।
  • কিছু নির্দিষ্ট কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাতের মান মনে রাখা দরকার।
  • পূরক কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত ব্যবহার করে ত্রিকোণমিতিক সমস্যা সমাধান করা যায়।
  • অনুশীলনী ৮.২ এবং ৮.৩ ত্রিকোণমিতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগুলো বুঝতে সহায়ক।

ফ্রিকোয়েন্টলি আস্কড কোয়েশ্চনস (FAQ)

এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং তাদের উত্তর দেওয়া হলো, যা ত্রিকোণমিতি বুঝতে সহায়ক হবে:

১. ত্রিকোণমিতি কেন দরকারি?

ত্রিকোণমিতি শুধু গণিতের একটি অংশ নয়, এটি আমাদের চারপাশের জগৎকে বুঝতেও সাহায্য করে। যেমন, এটি ব্যবহার করে পাহাড়ের উচ্চতা, নদীর বিস্তার, এমনকি দূরের নক্ষত্রের দূরত্বও মাপা যায়। এছাড়াও, নেভিগেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ত্রিকোণমিতির ব্যবহার রয়েছে।

২. ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলো মনে রাখার সহজ উপায় কী?

ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলো মনে রাখার জন্য কিছু মজার কৌশল আছে। যেমন, “SOH CAH TOA” – এখানে SOH মানে Sine = Opposite/Hypotenuse (লম্ব/অতিভুজ), CAH মানে Cosine = Adjacent/Hypotenuse (ভূমি/অতিভুজ), এবং TOA মানে Tangent = Opposite/Adjacent (লম্ব/ভূমি)।

৩. চতুর্ভাগগুলোয় ত্রিকোণমিতিক অনুপাতের চিহ্ন কেন ভিন্ন হয়?

চতুর্ভাগগুলোতে ত্রিকোণমিতিক অনুপাতের চিহ্ন ভিন্ন হওয়ার কারণ হলো কার্তেসীয় স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় x এবং y অক্ষের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক দিকের ভিন্নতা। প্রথম চতুর্ভাগে x এবং y উভয়ই ধনাত্মক, তাই সব অনুপাত ধনাত্মক। কিন্তু দ্বিতীয় চতুর্ভাগে x ঋণাত্মক হওয়ায় কোসাইন এবং ট্যানজেন্ট ঋণাত্মক হয়, শুধুমাত্র সাইন ধনাত্মক থাকে।

See Also  10MS Job Recruitment Courses

৪. পূরক কোণ কাকে বলে? এদের ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলো কী?

পূরক কোণ হলো দুটি কোণ, যাদের যোগফল ৯০°। পূরক কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলো হলো:

  • sin (90° – θ) = cos θ
  • cos (90° – θ) = sin θ
  • tan (90° – θ) = cot θ

এই সূত্রগুলো ব্যবহার করে একটি কোণের ত্রিকোণমিতিক মান জানা থাকলে, তার পূরক কোণের মানও বের করা যায়।

৫. ত্রিকোণমিতির বাস্তব জীবনের উদাহরণ কী কী?

ত্রিকোণমিতির বাস্তব জীবনে অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটা নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • ভূSurvey: জমি জরিপ এবং সীমানা নির্ধারণে ত্রিকোণমিতি ব্যবহৃত হয়।
  • Navigation: জাহাজ এবং উড়োজাহাজ তাদের অবস্থান নির্ণয় এবং দিক পরিবর্তনে ত্রিকোণমিতি ব্যবহার করে।
  • Engineering: architechraal নকশা তৈরি, সেতু নির্মাণ এবং অন্যান্য কাঠামো নির্মাণে ত্রিকোণমিতি ব্যবহৃত হয়।
  • Astronomy: গ্রহ, নক্ষত্র এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুর দূরত্ব এবং অবস্থান নির্ণয়ে ত্রিকোণমিতি ব্যবহৃত হয়।

আশা করি, এই আলোচনা তোমাদের ত্রিকোণমিতি বুঝতে সাহায্য করবে এবং তোমরা এই বিষয়ে আরও আগ্রহী হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *